সারা বিশ্বে গত তিন মাসে এক নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে; যেটা কেউই ভাবতে পারেনি। চীন থেকে সংক্রমণ হওয়া বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণহাণির সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। করোনাভাইরাসে নতুন নতুন আক্রান্ত হচ্ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সারা বিশ্ব এখন অবরুদ্ধ। যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল। শিল্প-কারখানা চলছে না। এটি এমন একটি দুর্যোগ যেখানে মানুষের মৃত্যু ঘটছে। জীবিকা বন্ধ হয়ে গেছে। যোগান ও চাহিদা দুটোতেই টান পড়েছে। এমন পরিস্থিতি বিশ্ব এর আগে কখনো দেখেনি। ১৯৩০ সালের মহামন্দাকেও ছাড়িয়ে যাবে ২০২০ সালের মহামন্দা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এবারের মহমন্দায় বিশ্বের অনেক দেশের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক হবে।
বিশ্ব এর আগে মহামন্দা দেখেছিল সেই ১৯৩০ সালে। যদিও ওই মন্দার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পুঁজিবাজারে ধস নামার মধ্য দিয়ে। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দা চলেছিল ১৯৩০ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের ধস পরবর্তীতে প্রভাব পড়েছিল সারা বিশ্বে।
আইএমএফ বলছে, ১৯৩০ সালের ওই মহামন্দাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে ২০২০ সালের মন্দা। এমনকি ২০০৮ সালের মন্দা চলমান মন্দার কাছে কিছুই নয় বলে জানিয়েছে আইএমএফ।
সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে চলতি অর্থবছরে বিশ্বের অর্থনীতি তিন শতাংশ ছোট করে আনবে। আর চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশে নেমে আসবে বলেও জানিয়েছে আইএমএফ।
এর আগে বিশ্বব্যাংকও জানিয়েছে, করোনা প্রভাবে এবছর শেষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে দুই থেকে তিন শতাংশের মধ্যে। অবশ্য সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলে আগামী অর্থবছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৫.৮ শতাংশে উন্নীত হবে বলেও জানিয়েছে আইএমএফ। করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির কি পরিমাণ ক্ষতি হবে তার একটি ধারণা দিয়েছে সংস্থাটি।
বলা হয়েছে, চলমান মহামারিতে চলতি অর্থবছরের বাকি সময় ও আগামী অর্থবছর মিলে বৈশ্বিক জিডিপির ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থের ক্ষতি হবে। যেটা জাপান ও জার্মানির যৌথ অর্থনীতির চেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, ইতালি, কানাডা, ব্রাজিল,যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি অনেক কমে যাবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ।