নির্ধারিত সময়ের মাত্র তিন ঘণ্টা আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বিএনপি নেতাদের পূর্ব-নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে দিয়েছে বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন। বুধবার (০৪ মার্চ) সকাল ১০টায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
বৈঠক বাতিলের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে ঠিক কী কারণে শেষ মুহূর্তে বৈঠকটি বাতিল হলো সে সম্পর্কে কিছু জানেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠকে আমির খসরুর পাশাপাশি দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের অংশ নেয়ার কথা ছিল। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে শামা ওবায়েদকে ফোন করা হয়। তিনি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমাকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করে কোনো লাভ হবে না, আমি কিছুই বলব না। কিছু জানার থাকলে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছেই জানতে হবে।গত সোমবার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা হোটেল সোনারগায়েঁ ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া: এ প্রমিজিং ফিউচার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরপর বিকেলে যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বৈঠক করছিলেন, ঠিক তখন জাতীয় প্রেস ক্লাবে জেএসডির পতাকা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আসার সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় দিল্লিতে দাঙ্গা হয়েছে এবং এ দাঙ্গার জন্য অভিযোগের তীর মোদির দল বিজেপির দিকে তাক করা হয়েছে। এই মুহূর্তে তার বাংলাদেশে আসা কতটা শোভনীয় হবে তা ভেবে দেখা উচিত।এমন বক্তব্যের একদিন পরই বৈঠক বাতিল হওয়ার খবরে অনেকটাই চুপসে গেছেন বিএনপি নেতারা। তারা কেউ এ বিষয়টি নিয়ে এখনই কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে বিএনপির প্রতিনিধি দল ভারত সফরও করেছে। বিএনপির তিন নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর সে সময় দিল্লি গিয়েছিলেন। বাংলাদেশে ‘প্রকৃত গণতান্ত্রিক আবহ প্রতিষ্ঠায়’ সাহায্য করার আরজি নিয়েই তারা সেখানে যান বলে খবরে প্রকাশ পায়। বিএনপির নেতাদের ওই সফরের পর দলটির অনেক নেতাই বলছিলেন, এর মাধ্যমে তাদের দল ভারতবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরে আসছে।
কিন্তু শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠকটি এভাবে বাতিল হয়ে যাওয়ায় ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক-উন্নয়নের সেই উদ্যোগে জল ঢেলে দেয়ার মতোই মনে করছেন অনেকে।