বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন

লেবুর খোসা ফেলে দেন? জানুন এর উপকারিতা ও ব্যবহার

ডেস্ক রিপোর্ট
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০
  • ৭৯৪ Time View

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বেশি বেশি ভিটামিন সি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন। আমাদের দেশে ভিটামিন সি-র সবচেয়ে ভালো উৎস হিসেবে ধরা হয় লেবুকে। তাই বলে আপনি কি রস বের করে ফেলার পর লেবুর খোসা ফেলে দেন? আপনার স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য লেবুর খোসা কতটুকু দরকারি তা জানার পর আপনি এ অভ্যাসটি পরিবর্তন করবেন তা হলফ করে বলা যায়। মজার বিষয় হলো, প্রতিটি লেবুর খোসাই পুষ্টিতে পরিপূর্ণ এবং এটি আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে। এ ছাড়া ত্বকের যত্নে লেবুর খোসার বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে এবং ঘরে ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসের সুরক্ষায়ও কাজে আসে। আর দেরি কেন, লেবু ও এর খোসার উপকারিতা ও ব্যবহার সর্ম্পকে জেনে নিন এ নিবন্ধে।

লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা :

পুষ্টি সরবরাহ করে

লেবুর রসের মতো এর খোসাতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং বেটা ক্যারোটিন রয়েছে। বাস্তবতা হলো, লেবুর খোসা এর রসের চেয়ে প্রায় পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। প্রায় ১০০ গ্রাম লেবুর খোসায় ১৩৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৬০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ১২৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ১০.৬ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।

হাড় মজবুত করে

ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম আপনার হাড়কে মজবুত করতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যগত উন্নতি ঘটাতে পারে। লেবুর খোসার এ পুষ্টিগুলো প্রদাহজনিত পলি আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগও প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে

ভিটামিন সি-র অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা আপনার নাড়িভুড়ি/অন্ত্রের ভেতরে থাকা কৃমি ও পরজীবী জীবাণু মেরে আপনাকে রক্ষা করতে পারে। এর এ বৈশিষ্ট্য আপনার দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে বিভিন্ন ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

একইভাবে লেবুর রসের মতো লেবুর খোসাও সাইট্রাস বায়োফ্লাভোনয়েড সমৃদ্ধ। যা আপনার জারণ চাপের মাত্রা কমাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। এ ছাড়া আর যা আছে তা আপনার দেহের ভেতরকে ক্ষারীয় করে তোলে। লেবুর খোসা ক্যানসারও প্রতিরোধ করতে পারে। আপনি হয়তো জানেন, অ্যাসিডিক পরিবেশে ক্যানসারের কোষগুলো বাড়তে থাকে। লেবুর খোসা আপনার দেহের ভেতরে ক্যানসার কোষগুলোর বেড়ে ওঠার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এমন লিমোনিন ও সালভস্ট্রোল কিউ৪০-এর মতো উপাদান সরবরাহ করে।

কীভাবে খাবেন লেবুর খোসা?

লেবুর থেকে ছাড়ানো খোসা আপনি জমিয়ে শুকিয়ে রাখতে পারেন। যাতে এগুলোকে ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিতে পারেন। এটা করার সহজ উপায় হলো ওভেন ব্যবহার করে ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় লেবুর খোসাগুলোকে ভাজাভাজা করা নিতে পারেন এবং সেঁকা খোসাগুলোকে পরে গুঁড়ো করে নিন। লেবুর খোসা গুঁড়ো বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। আপনি আপনার প্রতিদিনকার খাবার, পানীয়, অর্গানিক চা এবং স্যুপে লেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন।

লেবুর খোসা খাওয়া কতটা নিরাপদ?

লেবুর খোসা অক্সালেটের এক বড় উৎস। প্রতিদিন ৮০ মিলিগ্রামেরও বেশি অক্সালেট গ্রহণ কিডনি এবং পিত্তথলিতে পাথর তৈরি করতে পারে। এক চা চামচ লেবুর খোসাতে প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম অক্সালেট থাকতে পারে। তাই প্রতিদিন লেবুর খোসা গ্রহণের সর্বাধিক মাত্রা তিন চা-চামচের বেশি হওয়া উচিত নয়।

ত্বকের যত্নে লেবুর খোসার ব্যবহার :

ত্বক উজ্জ্বলকারী বডি স্ক্রাব

এক মুঠো লেবুর খোসার পেস্ট করে নিন। তারপরে ১-২ কাপ চিনি দিয়ে পেস্টটি ভালো করে মেশান। পরে আপনার ত্বকের ধরন বিবেচনা করে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। শুষ্ক ত্বকের জন্য তৈরি পেস্টে তৈলাক্ত ত্বকের চেয়ে বেশি তেল দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। মিশ্রণ তৈরির পর ভেজা ত্বকে আলতোভাবে ঘষে ঘষে লাগিয়ে নিন। এবার আপনি পরিষ্কার পানি দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন। এ স্ক্রাব ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক আরও উজ্জ্বল দেখাবে এবং ত্বকের মৃত কোষগুলোকে জীবিত করে তুলবে। লেবুর খোসার এ স্ক্রাব আপনার শুকনো কনুই নরম করতেও সহায়তা করবে। সপ্তাহে একবার আপনি লেবুর খোসার স্ক্রাব লাগাতে পারেন।

ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার

এক চিমটি লেবুর খোসার গুঁড়োর সাথে দুই টেবিল চামচ চালের গুড়ো মিশিয়ে নিন। এবার এ মিশ্রণটিতে ঠাণ্ডা দুধ দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। ত্বকের মৃত কোষগুলোকে জীবিত করে তুলতে এ পেস্টটি আপনার মুখের ভেজা ত্বকে সমানভাবে মেখে দিন। ১৫ মিনিটের জন্য মুখে এটি রেখে দিন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে আপনার মুখটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। লেবুর খোসার এ ফেস প্যাকটি আপনার ত্বক-কোষকে চাঙা করে তুলবে।

পা ফাটার চিকিৎসায়

এক কাপ ঝাঁঝরা করা লেবুর খোসা গুঁড়ো করে নিন। পরে এ গুঁড়োতে পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে মিশ্রণের মতো পেস্ট তৈরি করুন। এবার তৈরি করা এ পেস্টটি আপনার ফাটা পায়ে লাগিয়ে নিন। এর পরে আপনার পায়ে মোজা পড়ে নিন এবং পেস্টটি কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। পা ধুয়ে ফেলার পর আপনার পায়ের ত্বক নরম ও স্বাস্থ্যকর দেখাবে।

ছত্রাকের সংক্রমণ রোধে পায়ের চিকিৎসায়

তিন কাপ লেবুর খোসায় ৬ থেকে ৭ কাপ পানি দিয়ে আধা ঘণ্টা ধরে সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ পানি একটি পাত্রে ছেঁকে নিন। এ তরলটিতে দুধ বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এখন এ মিশ্রণটিতে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য পা ডুবিয়ে রাখুন। তারপর পানি দিয়ে আপনার পা ধুয়ে নিন এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। নিয়ম করে লেবুর খোসার পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলে সংক্রমণ দূর রাখতে সহায়তা করবে।

নখ সাদা রাখতে

আপনি কি নখ বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন? এক মুঠো লেবুর খোসা পেস্ট করে নিন। আপনার বিবর্ণ নখগুলোতে এ মিশ্রণটি ব্যবহার করুন এবং কয়েক মিনিটের জন্য রেখে দিন। পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ ধরনের যত্ন আপনার নখগুলোকে স্বাভাবিক রং ফিরে পেতে সহায়তা করবে।

গৃহস্থালির কাজে লেবুর খোসার ব্যবহার :

সব ধরনের পরিচ্ছন্নতায়

আপনার ঘরের আসবাব, মেঝে এবং অন্যান্য ব্যবহার্য তৈজসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখতে আপনি পরিষ্কারক হিসেবে লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে লেবুর খোসাগুলোকে পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিন এবং পরে ছেঁকে নিন। এবার অ-বিষাক্ত ডিআইওয়াই ক্লিনার তৈরি করতে এ পানির সঙ্গে প্রয়োজনমতো ভিনেগার বা বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। লেবুর খোসায় থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলোর দাগ তুলে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে। লেবুর খোসা দিয়ে তৈরি ক্লিনার ব্যবহারের বোনাস হিসেবে আপনার কাছে ধরা দিতে পারে সুগন্ধ।

দুর্গন্ধ দূর করতে

লেবুর খোসাগুলো প্রায়ই ফ্রিজ, বদ্ধ ড্রয়ার, ট্র্যাশ ক্যান ইত্যাদির ভেতরে তৈরি হওয়া দুর্গন্ধ দূর করে দিতে পারে। লেবুর খোসা আপনার মাইক্রোওয়েভ, কাটার বোর্ড ও অন্যান্য ব্যবহার্য পাত্র পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে জাদুর মতো কাজ করতে পারে। বাটির পানিতে কয়েকটি লেবুর খোসা রেখে বাটিটি কিছু সময়ের জন্য আপনার মাইক্রোওয়েভের ভেতরে রাখুন। এটি মাইক্রোওয়েভের ভেতরের দুর্গন্ধকে সতেজ গন্ধে পরিণত করবে। কাটার বোর্ডকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য লেবুর খোসার সাথে লবণ মিশিয়ে ঘষুন। তারপরে ধুয়ে ফেলার পর আপনি একটি নতুন বোর্ড পাবেন।

রুম ফ্রেশনার হিসেবে

লেবুর খোসা ব্যবহার করে আপনি ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক রুম ফ্রেশনার তৈরি করতে পারবেন। শুকনো ফুল ও প্রয়োজনীয় তেলের সঙ্গে লেবুর খোসা মেশান। এবার এ সাইট্রাস-সুগন্ধযুক্ত মিশ্রণটি একটি পরিষ্কার স্প্রে বোতলে রাখুন। এভাবে আপনি টাকা খরচ না করে আপনার ঘরকে সব সময় সুবাসিত রাখতে পারেন।

পোকামাকড় তাড়ানোর ওষুধ

আপনার বাড়িতে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে খরচ কমিয়ে দিয়ে বিকল্প হতে পারে লেবুর খোসার ব্যবহার। বিশেষ করে পিঁপড়া, তেলাপোকা ইত্যাদি লেবুর গন্ধকে সহ্য করতে পারে না। সুতরাং, আপনি আপনার ঘরের কোণে বা কোনার মতো জায়গা, যেমন—বইয়ের তাক, আলমারি, রান্নাঘরের তাক, স্টোর রুম ইত্যাদিতে লেবুর খোসা ছড়িয়ে রাখতে পারেন। মশার মতো পোকার হাত থেকে আপনার ত্বককে বাঁচাতে আপনি লেবুর খোসার ব্যবহার করতে পারেন। লেবুর রসের পরিবর্তে এর খোসার নির্যাস আপনার ত্বকের কোনো ক্ষতি করবে না এবং কীটপতঙ্গ দূরে থাকবে। সূত্র : ইউএনবি

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Suchana Community TV
themebazsuchana231231