বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:২৪ অপরাহ্ন

মাদক কে নির্মূল করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান –স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ সজীব আহমেদ রিওন

Sajib Joy
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১
  • ১১২ Time View

মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন ,মাদকের নেশা অনেক ভয়ংকর নেশা।সুতরাং চল যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ শ্লোগানকে সামনে রেখে মাদকের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। তিনি বলেন এক্ষেত্রে কেবল সরকার নয়,জনগণ,জনপ্রতিনিধি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,যেভাবে সবাই মিলে আমরা জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমন করেছি,একইভাবে মাদকের বিরুদ্ধেও সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এসময় মাদকাসক্ত ঐশির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন তার বাবাও কিন্তু  পুলিশ ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ কেরাণীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাষ্টের উদ্যোগে ওয়েসিস নামক একটি বিশ^মানের মাদকাসক্ত নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।  ওয়েসিস একটি ভালো উদ্যোগ ও আধুনিক মানের হাসপাতাল উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,আমরা সবাইকে চিকিৎসা সেবা দিতে চাই। তবে মাদকের ক্ষেত্রে সাপ্লাই,ডিমান্ড এবং হার্ম হ্রাস করতে হবে। সেক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। দেশে প্রায় ৫০লক্ষ লোক মাদকাসক্ত রয়েছে এমন উদ্বৃতি দিয়ে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এভাবে আধুনিক সেবার মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করে মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমানে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রনে না থাকলে কোন কিছুই নিয়ন্ত্রনে থাকেনা। সারা পৃথিবী অচল হয়ে যায়। তাই জনসচেতনতার মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রনে রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহবান তার। তাছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাষ্টের এ ধরনের আধুনিক ও বিশ^মানের মাদক নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাকে সাধুবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরেক বিশেষ অতিথি বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, দেশের মাদক নিয়ন্ত্রন ও সন্ত্রাস দমনে দিন রাত কাজ করে দেশের গণমানুষের সেবা দিচ্ছে পুলিশ। যে কারনে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। এসময় প্রতিমন্ত্রী কেরাণীগঞ্জের কলাতিয়ায় আরো একটি থানা করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ বিপিএম(বার)এর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন,স্বস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খূরশীদ আলম,মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো.আজিজুল ইসলাম,ঢাকা জেলা প্রশাসক মো.শহিদুল ইসলাম,বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.অরূপ রতন চৌধুরী,মনরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা.মো.গোলাম রাব্বানী, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ডা.মুহিত কামাল  ওয়েসিস মাদকাসক্ত নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শকেন্দ্রের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি  ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম বার পিপিএমবার, কেন্দ্র পরিচালক পুলিশ সুপার ডা. এসএম শহীদুল ইসলাম পিপিএম প্রমুখ। উল্লেখ্য-বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাষ্টের উদ্যোগে রাজধানীর শহরতলী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্প প্রতিষ্ঠিত  ওয়েসিস নামক এ মাদক নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্রটি অত্যন্ত মনমুগ্ধকর ও  নান্দনিক পরিবেশে উন্নত ব্যবস্থাপনায় দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র।  বাংলাদেশ পুলিশের পরিচালাধিন সম্পূর্ণ অলাভজনক  প্রতিষ্ঠান এটি। সাততলাবিশিষ্ট ৬০ শয্যার এই আধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা। যেখানে ২২টি কক্ষের ১৬টিতে ৪৬টি শয্যা থাকছে পুরুষদের জন্য । এছাড়া বাকি ছয়টি কক্ষে ১৪টি শয্যা থাকছে নারীদের জন্য । এরমধ্যে ডাবল কেবিন ২৮টি, ট্রিপল কেবিন ১৫টি এবং জেনারেল ওয়ার্ডে থাকছে ১১টি বেড। এছাড়া জেনারেল ট্রিপল বেড আছে ছয়টি। জেনারেল ওয়ার্ড ছাড়া সব ওয়ার্ড বা কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।এছাড়া প্রকল্পটির ছাদে রয়েছে গার্ডেন। যেখানে ছাদ বাগানে প্রাকৃতিক পরিবেশে খোলা আকাশের নিচে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইয়োগা এবং মেডিটেশন করবে রোগীরা। ছাদ বাগানের পাশে রয়েছে ব্যায়ামাগার। 
৬ষ্ঠ তলায় আছে নার্সিং স্টেশন। পঞ্চমতলায় আছে বিশেষ কেবিন ও ইনডোর গেমসের ববস্থা। সেখানে আছে টেবিল টেনিসসহ নানা ধরনের খেলার সরঞ্জামাদি। আছে লাইব্রেরি। চতুর্থতলায় রয়েছে ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, সাধারণ ওয়ার্ড এবং সাধারণ কেবিন। ভবনের তৃতীয়তলায় আছে কেবিন ব্লক, ডাইনিং ও বিশেষ নার্সিং স্টেশন। ভবনের দ্বিতীয় তলা ব্যবহৃত হবে প্রশাসনিক ব্লক হিসেবে। সেখানে থাকছে প্যাথলজি বিভাগও। আছে সাইকোলজি কাউন্সিলিং ও ফ্যামিলি কাউন্সিলিং এবং স্যাম্পল কালেকশন রুম। তাছাড়া পুলিশের অত্যাধুনিক এই মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটির অন্যতম চমক হচ্ছে গ্যাস ক্রমোটোগ্রাফি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। এই মেশিনের মাধ্যমে রক্ত ও প্রসাব ছাড়াও চুল থেকেও ডোপ টেস্ট করা যাবে। তিন মাস আগেও কেউ মাদক সেবন করে থাকলে তা ধরা পড়বে। দেশে প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক এই মেশিনটি স্থাপন করা হচ্ছে এই নিরায় কেন্দ্রে। এর ফলে দ্রুততম সময়ে শতভাগ নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ওয়েসিস কর্তৃপক্ষ সূত্র জানাযায় যে, সাধারন মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলাতে অহরহই আত্মহত্যার মত অনাকাঙ্খিত সব ঘটনা ঘটে থাকে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের  কর্তৃপক্ষ তাদের এ কেন্দ্রের রুমগুলো এমনভাবে তৈরি করেছেন, যেখানে কেউ চাইলেও আত্মহত্যা করার সুযোগ পাবেন না। কারণ কোনো রুমে সিলিংফ্যান নেই। তার পরিবর্তে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ ফ্যান । যেখানে ঝুলে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ২০ কেজি ওজনের বেশি কিছু ঝুললেই ভেঙে পড়বে এ ফ্যান।  এছাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রটির প্রতি রুমেই রয়েছে এটাস্ট বাথরুম। অথচ কেউ যাতে বাথরুমে গিয়ে আত্মহত্যা করতে না পারে সেজন্য কোনো বাথরুমেই রাখা হয়নি লক সিস্টেম।  তার পরিবর্তে রাথরুমগুলোর দরজায় লাগানো হয়েছে ম্যাগনেট। বাথরুমের শাওয়ারে রডের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্লাস্টিক। তাই শাওয়ারেও আত্মহত্যার সুযোগ নেই। প্রতি ফ্লোরের সিঁড়িতে আছে বিশেষ লকের ব্যবস্থা। তাই কোনো রোগী ইচ্ছা করলেই এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে অবাধে চলাচল করতে পারবেন না। মাদক নিরাময়কেন্দ্রে জানালার সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে। কিন্তু ওয়েসিস মাদক নিরাময় কেন্দ্রের জানালায় রয়েছে স্বচ্ছ কাচ। জানালার গ্রিল হিসেবে দেওয়া হয়েছে শক্ত নেট। যেখানে কোনো কিছু বাঁধার সুযোগ নেই। জানালার পর্দাগুলো লাগানো হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায়। জোরে টান দিলে নিচে পড়ে যাবে। তাই জানালা বা পর্দা ব্যবহার করে আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকছে না। বেশির ভাগ রুমে রয়েছে দুটি করে বেড। তবে ভিআইপি কেউ একা থাকতে চাইলে ওই রুম থেকে একটি বেড অপসারণের সুযোগ রয়েছে।জানাযায়, মোট ৮৫ জন জনবল সংখ্যা নিয়ে আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হলো এ মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি। এর মধ্যে একজন পরিচালক (এসপি পদমর্যাদার), তিনজন সহকারী পরিচালক, চারজন কো-অর্ডিনেটর এবং ২৭ জন নার্সিং অফিসার বা মেট্রন রয়েছে। এছাড়া হিসাব শাখায় ২ জন, নিরাপত্তা ও রিসিপশন শাখায় ১১ জন, কন্ট্রোল রুমে ছয়জন এবং প্রশাসন শাখায় জনবল আছে আরও ১৪ জন। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। আমাদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছরের মধ্যে মানিকগঞ্জে আরও একটি অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে ইতোমধ্যে ১০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। আরও জমি কেনা হবে। ওই কেন্দ্রটিতে সুইমিং পুল এবং গার্ডেনসহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে সময় লাগবে। এজন্য আপাতত কেরানীগঞ্জে প্রকল্পটি শুরু করছি। সম্পূর্ণ অলাভজনক এই সেবা নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ  যেখানে আর্ন্তজাতিক মানের সেবা পাবেন সেবা গ্রহীতারা এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন আমাদের অনেক সফলতার মাঝে আশা করছি, আমাদের এ প্রকল্পটিও সফলতার মুখ দেখবে।ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক পুলিশ সুপার ডা. এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাময় কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে।  যা আধুনিক পুলিশের আইকন খ্যাত ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন,প্রকল্পটি শুরুর আগে আমরা বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। ওইসব কেন্দ্রে যেসব ত্রুটি চোখে পড়েছে, এই কেন্দ্রে সে ধরনের কোন ত্রুটি রাখা হয়নি। কাজেই নতুন এ প্রকল্পটির সফলতা নিয়ে তিনিও যথেষ্ঠ আশাবাদি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Suchana Community TV
themebazsuchana231231