দেশে আবারও বাড়ল বিদ্যুতের দাম। মার্চ থেকে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে ইউনিটপ্রতি ৩৬ পয়সা বেশি দিতে হবে। বৃহস্পতিবার গ্রাহক (খুচরা) পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানোয় বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত এ ৩৬ পয়সা যোগ হবে। ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে নতুন দাম।
এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দামও ফের বাড়াল। ঢাকা ওয়াসার প্রতি হাজার লিটার পানি আবাসিকে ২.৮৯ টাকা ও বাণিজ্যিকে ২.৯৬ টাকা বেড়েছে। আর চট্টগ্রামে আবাসিকে ২.৪৮ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ২.৭৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে বর্তমান সরকারের সময়ে কয়েক দফায় দাম বাড়ল গুরুত্বপূর্ণ এ পণ্য দুটির।
বিদ্যুতের শুধু খুচরা নয়, পাইকারি ও সঞ্চালন ক্ষেত্রেও দাম বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) প্রতি ইউনিটের দাম গড়ে ৩৬ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা করা হয়েছে। পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট গড়ে ৪০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। ৪ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে বেড়ে প্রতি ইউনিটের দাম হয়েছে ৫ টাকা ১৭ পয়সা।
এছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন মূল্যহার বা হুইলিং চার্জ প্রতি ইউনিটে শূন্য দশমিক ২৭৮৭ টাকা থেকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ২৯৩৪ টাকা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মূল্য বৃদ্ধির এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি
কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল। তিনি বলেন, মার্চ থেকে এ দাম কার্যকর হবে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ায় সরকার, যা ওই বছর ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। এরও আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। গত বছরের জুনের শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ২ মাসের মাথায় বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর জন্য বিইআরসিতে প্রস্তাব পাঠাতে শুরু করে বিতরণ কোম্পানিগুলো।
স্লাব অনুযায়ী দাম বাড়ার হার : আবাসিক খাতে লাইফ লাইন ০ থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের ইউনিটপ্রতি ৩ দশমিক ৭৫ টাকা। আগে ছিল ৩ দশমিক ৫০ টাকা। প্রথম ধাপে ০ থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত নতুন দাম হবে ৪ দশমিক ১৯ টাকা। আগে এ হার ছিল ৪ টাকা।
দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ টাকা ৭২ পয়সা। আগে ছিল ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। তৃতীয় ধাপে ২০১-৩০০ পর্যন্ত নতুন দর ৬ টাকা। আগে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৭০ টাকা। চতুর্থ ধাপে ৩০১ থেকে ৪০০ পর্যন্ত ৬ দশমিক ৩৪ টাকা। আগে হার ছিল ৬ টাকা ০২ পয়সা।
পঞ্চম ধাপে ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত ৯ দশমিক ৯৪ টাকা। আগের দাম ছিল ৯ টাকা ৩০ পয়সা এবং ষষ্ঠ ধাপে ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারীকে ইউনিটপ্রতি ১১ দশমিক ৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এ ইউনিট ব্যবহারকারীকে ১০ টাকা ৭০ পয়সা হারে বিল পরিশোধ করতে হবে। একই সঙ্গে এ শ্রেণির গ্রাহককে মাসে ডিমান্ড চার্জ দিতে হবে ৩০ টাকা। আগে এ চার্জ ছিল ২৫ টাকা।
এছাড়া কৃষিতে দাম বেড়েছে ইউনিটপ্রতি ১৬ পয়সা : সেচ-কৃষিকাজে ব্যবহৃত পাম্পের ক্ষেত্রে সব কোম্পানির জন্য ইউনিটপ্রতি দাম ৪ দশমিক ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এ দাম ছিল ইউনিটপ্রতি চার টাকা। এছাড়া মাসিক ডিমান্ড চার্জ ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। এরও আগে কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ পাম্প ব্যবহারকারী পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো ও ওজোপাডিকোর গ্রাহকরা ৩ টাকা ৮২ পয়সা এবং আরইবি ও পবিস গ্রাহকরা ৩ টাকা ৮২ পয়সা পরিশোধ করতেন। নতুন মূল্যহার অনুযায়ী কৃষিতে ব্যবহৃত সেচে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ইউনিটপ্রতি ১৬ পয়সা।
ক্ষুদ্র শিল্পে ফ্ল্যাট রেট করা হয়েছে ইউনিটপ্রতি ৮ দশমিক ৫৩ টাকা। অপরদিকে অফ-পিক সময়ে ইউনিটপ্রতি ৭ দশমিক ৬৮ টাকা। আর পিক আওয়ারে এর হার হবে ১০ দশমিক ২৪ টাকা।
শিক্ষা, ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালের ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি ৬ দশমিক ০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এ দর ছিল ৫ টাকা ৭৩ পয়সা। রাস্তার বাতি, পানির পাম্প ও ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি দাম আগের হারে ৭ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর মাসিক ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা।
নিম্নচাপের বাণিজ্যিক গ্রাহক : নিম্নচাপের বাণিজ্যিক গ্রাহকের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ইউনিটপ্রতি আগের দাম ১০ টাকা ৩০ পয়সা, অফ-পিকে ৯ টাকা ২৭ পয়সা, পিক সময়ে ১২ টাকা ৩৬ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিমান্ড চার্জ ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০ টাকা। এ ছাড়া বাণিজ্যিক গ্রাহকদের মধ্যে অস্থায়ী গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি ১৬ টাকা এবং ডিমান্ড চার্জ ১০০ টাকা আগের মতো রয়েছে।
তিন চাপে গ্রাহকদের জন্য দাম বৃদ্ধির হার বেশি : এবার মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মধ্যম চাপ, উচ্চচাপ ও অতি উচ্চচাপের সরবরাহ লাইনের ব্যবহারকারীর শ্রেণি বেড়েছে। মধ্যম চাপ (১১ কেভি লাইন ব্যবহারকারী) গ্রাহকের মধ্যে আবাসিক খাতে ফ্ল্যাট রেট ইউনিটপ্রতি ৮ দশমিক ৪০ টাকা, অফ-পিক সময়ে ৭ টাকা ৫৬ পয়সা, পিক সময়ে ১০ দশমিক ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাসিক সার্ভিস চার্জ করা হয়েছে ৬০ টাকা।
বাণিজ্যিক ও অফিস গ্রাহকের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ৯ টাকা ১২ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ৮ টাকা ২১ পয়সা এবং পিক সময়ে ১১ টাকা ৪০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাসিক সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা।
এ শ্রেণির শিল্প গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ৮ টাকা ৫৫ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ৭ টাকা ৭০ পয়সা এবং পিক সময়ে ১০ টাকা ৬৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাসিক ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা।
নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ১১ টাকা ৪৬ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ১০ টাকা ৩১ পয়সা এবং পিক সময়ে ১৪ টাকা ৩৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাসিক সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। সাধারণ খাতে ফ্ল্যাট রেট ৮ টাকা ৪৫ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ৭ টাকা ৬১ পয়সা এবং পিক সময়ে ১০ টাকা ৫৬ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাসিক সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা। এছাড়া অস্থায়ী সংযোগের ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি ১৫ টাকা এবং মাসিক চার্জ ১০০ টাকা আগের দাম অপরিবর্তিত থাকবে।
উচ্চচাপ বা ৩৩ কেভি লাইন ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে সাধারণ গ্রাহকের জন্য ফ্ল্যাট রেট ইউনিটপ্রতি ৮ টাকা ৪১, অফ-পিক সময়ে ৭ টাকা ৫৭ পয়সা এবং পিক সময়ে ১০ টাকা ৫১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাসিক ডিমান্ড চার্জ রাখা হয়েছে ৬০ টাকা।
বাণিজ্যিক ও অফিস গ্রাহকদের জন্য ফ্ল্যাট রেট ইউনিটপ্রতি ৯ টাকা ০২ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ৮ টাকা ১২ পয়সা এবং পিক সময়ে ১১ টাকা ২৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিমান্ড চার্জ ৬০ টাকা। শিল্প গ্রাহকের জন্য ফ্ল্যাট রেট ইউনিটপ্রতি ৮ টাকা ৪৫ পয়সা, অফ-পিক সময়ে ৭ টাকা ৬১ পয়সা এবং পিক সময়ে ১০ টাকা ৫৬ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডিমান্ড চার্জ ৬০ টাকা। নির্মাণ গ্রাহকদের জন্য ফ্ল্যাট রেট ইউনিটপ্রতি ১০ টাকা ৬০, অফ-পিক সময়ে ৯ টাকা ৫৪ এবং পিক সময়ে ১৩ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাসিক ডিমান্ড চার্জ ৬০ টাকা। অতি উচ্চচাপ বা ১৩২ কেভি এবং ২৩০ কেভি লাইন ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সাধারণ-১ (২০ মেগাওয়াট থেকে ১৪০ মেগাওয়াট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) এর ফ্ল্যাট রেট ইউনিটপ্রতি ৮ টাকা ৩৬ পয়সা, অফ-পিকে ৭ টাকা ৫২ পয়সা এবং পিক সময়ে ১০ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণ-২ (১৪০ মেগাওয়াটের বেশি) এর ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ইউনিটপ্রতি ৮ টাকা ৩০ পয়সা, অফ-পিকে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা এবং পিক সময়ে ১০ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে ডিমান্ড চার্জ ৬০ টাকা।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম ফের বাড়ল : আবারও বাড়ল ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম। ঢাকা ওয়াসার প্রতি হাজার লিটার পানি আবাসিকে ২.৮৯ টাকা ও বাণিজ্যিকে ২.৯৬ টাকা বেড়েছে। আর চট্টগ্রামে আবাসিকে ২.৪৮ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ২.৭৪ টাকা বেড়েছে। বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগ এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি আদেশ জারি করে তা দুই ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠায়।
আবাসিকে ১০.৫০ টাকা থেকে ১১.২ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ৩৩.৬০ টাকা থেকে ৩৫.২৮ টাকা করা হয় এবং ২০১৯ সালে আবাসিকে ১১.২ টাকা থেকে ১১.৫৭ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ৩৫.২৮ টাকা থেকে ৩৭.০৪ টাকা করা হয়।