বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন

ফাইনালের লড়াইয়ে মুখোমুখি ভারত-নিউ জিল্যান্ড

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৯
  • ৩৫২ Time View
বিশ্বকাপে দুই দলের পথচলা ছিল দুই রকমের। ভারত এগিয়েছে অনেকটাই মসৃণ গতিতে। একটি ম্যাচ ছাড়া হোঁচট খেতে হয়নি আর। নিউ জিল্যান্ডের শুরুটা ছিল দৃঢ়পায়ে। কিন্তু পা হড়কেছে কয়েকবার। প্রাথমিক পর্বের প্রায় শেষ পর্যন্ত থাকতে হয়েছে সেমি-ফাইনাল নিয়ে শঙ্কায়। তবে এখন সে সবের মূল্য আছে সামান্যই। একটি ম্যাচ, একটি দিন, একটি প্রতিপক্ষ। জিতলেই বিশ্বকাপ ফাইনাল!

বিশ্বকাপের প্রথম সেমি-ফাইনালে মঙ্গলবার ম্যানচেস্টারে মুখোমুখি হবে দল দুটি। প্রাথমিক পর্বের শীর্ষে থেকে এই লড়াইয়ে এসেছে ভারত। নিউ জিল্যান্ড এসেছে শেষ দল হিসেবে, পাকিস্তানের সমান পয়েন্ট ও জয় নিয়েও রান রেটে এগিয়ে থাকায়।

গত বিশ্বকাপেও সেমি-ফাইনালের মঞ্চে পা পড়েছিল এই দুই দলের। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ভারত। এবারও দুই দলের একটিকে বিদায় নিতে হবে ফাইনালের আগে।

ব্যাটিং-বোলিংয়ে দুই দলের শক্তি-সামর্থ্য কিংবা সাম্প্রতিক ফর্ম, সব বিচারেই বেশ এগিয়ে ভারত। বিশ্বকাপে প্রাথমিক পর্বে দুই দলের ম্যাচটি ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। তবে বছরের শুরুতে নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে এসেছে ভারত।

ভারতের টপ অর্ডার দুর্দান্ত, ফর্মে আছেন প্রথম তিন ব্যাটসম্যান। তাদের বোলিং আক্রমণ সম্ভবত টুর্নামেন্টের সেরা। পেস-স্পিন মিলিয়ে বৈচিত্রময় বোলিং আক্রমণে নেই দুর্বলতা।

বোলিংয়ে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে নিউ জিল্যান্ড। পেস আক্রমণ তাদেরও দারুণ। কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চেহেল কিংবা রবীন্দ্র জাদেজার বৈচিত্র তাদের নেই। তবে মিচেল স্যান্টনার যথেষ্টই কার্যকর।

কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, জিমি নিশামের মতো অলরাউন্ডাররা একই সঙ্গে নিউ জিল্যান্ডের বড় শক্তি, কখনও আবার দুর্বলতা। ‘একটু বোলিং, একটু ব্যাটিং’ দিয়ে নিজেদের দিনে যেমন তারা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে, তেমনি শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অনেক সময় অনুভূত হতে পারে বিশেষজ্ঞ কারও অভাব।

মূল পার্থক্য দুই দলের ব্যাটিংয়ে। কাগজে-কলমে খুব বেশি নয়, তবে এই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে। বিশেষ করে টপ অর্ডারে।

রোহিত শর্মার রান মেশিন চলছেই। এক বিশ্বকাপে পাঁচ সেঞ্চুরির অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়ে ফেলেছেন। এক বিশ্বকাপে শচিন টেন্ডুলকারের সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড ভাঙাও মনে হচ্ছে কেবল সময়ের ব্যাপার।

শিখর ধাওয়ান ছিটকে যাওয়ার পর রোহিতের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন লোকেশ রাহুল। তিনে বিরাট কোহলিকে নিয়ে নতুন করে বলার আছে সামান্যই। বিস্ময়করভাবে অবশ্য এই বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি পাননি ভারতীয় অধিনায়ক, তবে টানা পাঁচ ফিফটিতে আছেন তিনি রান প্রবাহেই।

নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিংকে বলতে গেলে একা টেনেছেন উইলিয়ামসন। টপ অর্ডারে মার্টিন গাপটিল, কলিন মানরো চূড়ান্ত ব্যর্থ। সুযোগ পেয়ে হেনরি নিকোলস সুবিধে করতে পারেননি। বিশ্বকাপের আগে দুই বছরে দুর্দান্ত পারফর্ম করা রস টেইলর বিশ্বকাপে শুরু দারুণ করলেও ধরে রাখতে পারেননি ধারাবাহিকতা। লোয়ার মিডল অর্ডারে নিশাম, ডি গ্র্যান্ডহোমরা চেষ্টা করেছেন বিপর্যয়ে দলকে উদ্ধার করার।

গাপটিল ও টেইলরের আপন চেহারায় থাকতে না পারাই মূলত ভুগিয়েছে নিউ জিল্যান্ডকে। সেমি-ফাইনালেও দুজন স্বরূপে ফিরতে না পারলে কিউইদের আশা থাকবে সামান্যই।

ভারতের দৃশ্যমান একটি দুর্বলতাই চোখে পড়ে। মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞতা ও ভরসার অভাব। রিশাভ পান্ত দারুণ সম্ভাবনাময়, তবে এখনও পরীক্ষিত নন। দিনেশ কার্তিক বা কেদার যাদব মিডল অর্ডারে বড় দায়িত্ব নেওয়ার মতো কিনা, সেটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ।

টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই অবশ্য এটি ছিল ভারতের দুর্বলতা। কিন্তু টপ অর্ডারের অসাধারণ ফর্ম মিডল অর্ডারকে পরীক্ষায় ফেলতে দেয়নি। সেমি-ফাইনালে জিততে হলে এখানেই ছোবল দিতে হবে নিউ জিল্যান্ডকে। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসনরা যদি ১০-১৫ ওভারের মধ্যে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে ফেরাতে পারেন, উজ্জ্বল হবে কিউইদের সম্ভাবনা।

সেমি-ফাইনালের মতো ম্যাচে ক্রিকেটীয় স্কিলের বাইরেও বড় একটি নিয়ামক, চাপ। বড় ম্যাচের চাপ কে কতটা সামলাতে পারে। চাপে অনেক সময় সহজাত খেলা যায় হারিয়ে, অনেক সময় বের করে আনে সেরাটা।

এখানেও এগিয়ে রাখা যায় ভারতকে। চাপের সঙ্গে যে তাদের নিত্য বসবাস! ম্যাচের আগের দিন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি চাপের কথা শুনেই হেসে উঠলেন, “ভারতীয় দলের জন্য সব ম্যাচই চাপের। কখনোই ভাবতে পারিনি কোনো ম্যাচ আমাদের জন্য সহজ। মনে করতে পারি না, শেষ কবে মাঠে নেমে এমন মনে হয়েছে যে, ‘এই ম্যাচে যা-ই হোক, কোনো ব্যাপার না। ভারতের ম্যাচে সবসময়ই গ্যালারি থাকে ভর্তি, প্রত্যাশা থাকে প্রবল। সব ম্যাচই চাপের। এজন্যই আমরা আগের চেয়ে এই ধরনের পরিস্থিতি বেশি সামলাতে পারি।”

নিউ জিল্যান্ডের এত প্রত্যাশার চাপ নেই। ম্যাচের আগে এগিয়ে-পিছিয়ে থাকার হিসাবও সেমি-ফাইনালে খুব একটা কাজে দেবেনা বলে মনে করেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।

“আমরা আন্ডারডগ হই বা না, এসবের আসলে কোনা অর্থ নেই। কালকে আমরা কিভাবে মাঠে নামি, পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন করতে পারি, নিজেদের কতটা উজার করে দিয়ে খেলতে পারি, এসবই আসল।”

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এবার আগের ম্যাচগুলো ধারাবাহিকভাবে রান দেখেছে প্রচুর। তবে সেমি-ফাইনাল হবে একদম নতুন উইকেটে। অপেক্ষা করতে হবে সেটির আচরণ দেখতে। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে টস। এখানে এবার আগের সব ম্যাচই জিতেছে আগে ব্যাট করা দল। তবে সবকিছুর বাইরে, উইলিয়ামসনের কথাটিই হয়তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেমি-ফাইনালের মতো ম্যাচে আগের হিসাব-নিকাশের মূল্য আছে সামান্যই। নতুন দিনে নতুন শুরু। রোমাঞ্চকর ম্যাচের প্রতীক্ষা তাই করাই যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Suchana Community TV
themebazsuchana231231