প্রায় দেড় বছর পর অবশেষে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আবারও শিশু-কিশোরদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠবে দেশের বিদ্যাপীঠের আঙিনা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মুখর হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। পাঠদান, পরীক্ষা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিথস্ট্ক্রিয়ায় শিক্ষাঙ্গনে ফিরে আসবে প্রাণের স্পন্দন। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর রোববার থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পরদিন ১৩ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে খুলে দেওয়া হবে সব মেডিকেল কলেজ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বড় অংশের টিকা সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সিন্ডিকেটের সভা ডেকে খোলার দিন-তারিখ নির্ধারণ করতে পারবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। আগামীকাল রোববার এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এতে সভাপতিত্ব করবেন। সেখানেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। গতকাল শুক্রবার চাঁদপুরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলবে সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে এইচএসসি পরীক্ষা। চাঁদপুর সরকারি মহামায়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনের সময় তিনি এ কথা জানান। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি দফায় দফায় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ঘোষণায় এ ছুটি ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। তাই ১১ সেপ্টেম্বরের পর ছুটি বাড়ানোর আর প্রয়োজন পড়বে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বড় কোনো সমস্যা আর না হলে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে। বড় পাবলিক পরীক্ষাগুলো নেওয়া সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে এ সময় শিক্ষামন্ত্রী জানান, নভেম্বরের মধ্যে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের শুরুতে এইচএসসির ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করা যাবে।এর আগে গত বৃহস্পতিবার যত দ্রুত সম্ভব স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। প্রস্তুতি কতদূর: এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি আছে বলে সমকালকে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত দুই মাস ধরে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখেছি। প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসনিক কার্যক্রমও বেশ আগে থেকেই চলছে। এখন একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম। তিনি বলেন, পাঠদান শুরুর জন্য সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রতি দু’দিন পরপর বিদ্যালয় পরিস্কার করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষকই প্রতিদিন স্কুলে আসছেন। মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রতিদিন বিদ্যালয় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকি করছেন। আমরাও প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে অনলাইন সভা করছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুতি রয়েছে প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরও। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, মতিঝিলের প্রধান ক্যাম্পাসসহ তাদের মুগদা ও বনশ্রীর দুটি শাখা ক্যাম্পাসও পুরোপুরি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার জন্য বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে সাবান, পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাজধানীর মনিপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন জানান. তাদের চারটি ক্যাম্পাসই ঝকঝকে করে রাখা হয়েছে। বিদ্যালয় খুললে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা যাবে।
ইতিবাচক মত পরামর্শক কমিটির: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়েছে কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল তিনি বলেন, কারিগরি কমিটি মতামত দিয়েছে। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে।এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বৈঠক হয়। সেখানেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কমিটির সদস্যরা মতামত দেন।