আজ মঙ্গলবার দেশবরেণ্য রাজনীতিক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৭৪ তম জন্মদিন। বরেণ্য এই রাজনীতিক ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক মন্ত্রী, ঢাবির ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান, প্রথিতযশা ভূ-বিজ্ঞানী, লেখক ও গবেষক। ড. মোশাররফ দাউদকান্দি আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ’৬২ সালে মেট্রিকুলেশন, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ’৬৪ সালে আইএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ’৬৮ সালে এমএসসি, ’৭০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে এমএসসি, ’৭৩ সালে ডিআইসি ডিপ্লোমা এবং ’৭৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। ’৭৫ সালে বিলাত থেকে দেশে ফিরে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ’৮৭ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ’৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবার জন্য তিনি ঢাবির শিক্ষকতা থেকে পদত্যাগ করেন। এই আলোকিত রাজনীতিক ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এ.জি.এস ও ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের ভি.পি নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে তিনি ’৭১-এ বিলাত প্রবাসীদের সংগঠিত করেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসেবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৭, ২০১২ ও ২০১৪ সালে গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৫ বছর কারান্তরীণ ছিলেন। ’৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ঢাবির এই মেধাবী শিক্ষক বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ’৯৪ সাল থেকে ড. মোশাররফ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। তিনি কুমিল্লা-২ আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ’৯১-’৯৬ সময়ে বিএনপি সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী, ’৯৬ সালে স্বল্প মেয়াদে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০১-০৬ সময়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ‘প্রাবণ ভূমিতে মৎস্য চাষ’ পদ্ধতির উদ্ভাবক। এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে ড. মোশাররফ বাংলাদেশে মৎস্য খাতের উন্নয়নে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এই মৎস্য চাষ পদ্ধতি ‘দাউদকান্দি মডেল’ হিসেবে সরকারী স্বীকৃতি পেয়েছে। মৎস্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ড. মোশাররফ জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি ২০০৩ সালে ৫৬ তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সভাপতিত্বে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) গৃহীত হয়। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং বিশ্বব্যাপী তামাক বিরোধী আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ড. মোশাররফকে ‘ওয়ার্ল্ড নো টোবাকো এওয়ার্ড-২০০৪’ পদকে ভূষিত করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান’, ‘প্রাবণ ভূমিতে মৎস্য চাষ: দাউদকান্দি মডেল’, ‘সংসদে কথা বলা যায়’, ‘এই সময়ের কিছু কথা’, ‘ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের কারাগারে ৬১৬ দিন’, ‘রাজনীতির হালচাল’, ‘সময়ের ভাবনা’ এবং ‘জরুরী আইনের সরকারের দুই বছর (২০০৭ ও ২০০৮)’ নামের ৮টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাময়িকিতে ৫০টির বেশি ‘বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ’ প্রকাশিত হয়েছে। ভূ-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণা ও অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ড. মোশাররফের জীবন বৃত্তান্ত ‘হু ইজ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ কেমব্রিজ বায়োগ্রাফি জার্নাল এবং আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইন্সটিটিউট প্রকাশিত পুস্তকে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। ভূতত্ত্ব বিষয়ে স্ট্রাকচারাল এ্যানালাইসিসে তাঁর নতুন উদ্ভাবন ‘হোসাইন’স মেথড অব এক্সটেনশন’ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুস সালাম প্রতিষ্ঠিত আইসিটিটি’র এসোসিয়েট সদস্য এবং থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্সে একজন ফেলো। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। ৭৪ তম জন্মদিনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লার দাউদকান্দি, মেঘনা, তিতাস ও হোমনা উপজেলা তথা বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভার্থীসহ দেশবাসীর কল্যাণ কামনা করেছেন। তিনি সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।