দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা । আগামী ১০ জুলাই রবিবার উদযাপিত হবে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় দিনটিকে পালন করে থাকে। এ উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কামার দোকানিরা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় এসব কামারদের। লোহা হাতুড়ির টুং টাং শব্দে দিনরাত জেগে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কামারদের হাতের সাহায্য নিয়ে কৃত্রিম বাতাসের তালে তারা পোড়াচ্ছেন কয়লা, জ্বালাচ্ছেন লোহা। সেই লোহাকে হাতুড়ি পেটা করে মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করছেন নানা প্রকৃতির ছুরি-চাকু-দা। এই ঈদে গরু, ছাগল,উট দুম্বা মহিষ কোরবানি হিসেবে পশু জবাই করা হয়। সারাদেশে ওই দিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কোরবানির পশু জবাই চলে। এসব পশুর গোশত কাটতে দা-বটি, ছুরি-ছোরা, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। আর এসব চাহিদা মিটানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিরোলস ভাবে তৈরি করে যাচ্ছেন কামাররা। পশু জবাই থেকে শুরু করে চামড়া ছাড়ানো এবং মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত দা, ছুরি, চাপাতি, বটি ইত্যাদি সরঞ্জাম কেনার হিড়িক পড়েছে দাউদকান্দির বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত,স্থায়ী ও অস্থায়ী ভ্রাম্যমান হাট-বাজারগুলোতে । সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার এলাকায় স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে কোরবানি পশু জবাইয়ের এসব সরঞ্জাম। কামাররা জানান, ঈদ উপলক্ষে লৌহজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানীর পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি প্রতি পিস ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা ,পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। তারা জানান, সারা বছর কাজ কম থাকে। স্বাভাবিকভাবে এ ঈদ এলে আমাদের কাজের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হয়। ক্রেতাদেরও কমতি নেই। একটু বেশি আয়ের উদ্দেশ্যে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয় আমাদের। তবে মজুরী একটু বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই লোহা এনে দা, চাকু ও ছুরি বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ক্রেতা জানান, কোরবানি ঈদের কিছুদিন বাকি তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার কাজটি সেরে ফেলছেন। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, বঁটির দাম একটু বেশি। কামার বলেন, কুরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লা ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগেও প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিলো ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সেই কয়লা এখন আমাদের ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই আমরা চাপাতি, ছুরি ও দায়ের দাম একটু বেশি নিচ্ছি। তা না হলে আমাদের লাভ হবে না। এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন বাপ-দাদার পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছি। সারা বছর কাজের চাপ থাকে না। যা লাভ এই ঈদ মৌসুমেই। তাই ঈদে সামান্য একটু বেশি নিয়ে থাকি। তবে এবারের ঈদে চাপ বেশি, তাই কর্মচারীও সঙ্গে নিয়েছি।।