কারাবন্দি হওয়ায় এখানে সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের করার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।তিনি বলেছেন, আমাদের অনেক কর্মসূচি রয়েছে। অনেক কাজও রয়েছে। দেশের কাজ, দলের কাজ। একজন খালেদা জিয়াকে নিয়ে বারবার প্রশ্নের জবাব দেব- সেই সময় আমাদের নেই। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথসভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নেতারা ছাড়াও ঢাকা বিভাগের অধীন সব সাংগঠনিক জেলা ও মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্যরা এই সভায় যোগ দেন। খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক মামলা নয়, দুর্নীতির মামলা। আদালত যেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। এটা আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ হাসিনার হাতে নেই। আমাদের কারও এখতিয়ারেও নেই। কাজেই বারবার এটা নিয়ে করে বিব্রত করবেন না। আমি বারবার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না।’করোনাভাইরাসে দেশের অর্থনীতি কোনো প্রভাব পড়ছে কিনা এবং এই বিষয়ে সরকারের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি যদি কোনো ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কোনো কারণে মন্দা দেখা দেয় তার প্রভাব সারাবিশ্বেই থাকে। তবে করোনাভাইরাস আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, সেই অবস্থা এখনও আসেনি। এটা যদি বেশি দিন থাকে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। করোনাভাইরাস দীর্ঘমেয়াদী হলে পদ্মা সেতুর কাজে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে কর্মরত আড়াইশ চীনের কর্মী ও শ্রমিক তাদের নববর্ষ উপলক্ষে স্বদেশে ছুটিতে গেছেন। তারা এখনও ফিরে আসেননি। করোনা ভাইরাসের যে প্রতিক্রিয়া, এরপরও পদ্মা সেতুতে তিনটি স্প্যান বসে গেছে। বৃহস্পতিবার একটি স্প্যান বসার কথা। তিনি বলেন, যারা ছুটির কারণে চীনে আছেন আগামী আড়াই মাসের মধ্যে তারা ফিরে না আসলে একটু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী দুই মাসে কাজের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে এপ্রিল থেকে পুরোদমে এই পরিক্রমা শুরু হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আমরা মোট ২৯টি জেলা সম্মেলন করেছি। এর মধ্যে দুটি ঢাকা সিটির। কিন্তু ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত কোনো সম্মেলন হয়নি। শেখ হাসিনার বড় নির্দেশনা হচ্ছে দলকে সাজাতে হবে। সাংগঠনিকভাবে সুশৃঙ্খল এবং সময়ের চাহিদা মেটানো আমাদের অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল ক্ষমতায় থাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা টের পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অনেক জায়গায় দেখা যায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়ে আছেন ৮-১০ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু আর কেউ নেই, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আবার অনেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিচ্ছেন, অনুমোদন পেতে পেতে ছয় মাস। সম্মেলন করতে বললে বলেন- ‘আমাদের তো মেয়াদ শেষ হয়নি’। সম্মেলন যেদিন থেকে হবে ক্ষণগণনা সেদিন থেকে হবে। তাই কেন্দ্রীয় সম্মেলন থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
ঘরে বসে দলীয় কমিটি করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে জনিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্মেলন ছাড়া কোনো কমিটি করা যাবে না। অনেক সময় জেলার নেতারা উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। এটা হবে না। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া কোনো কমিটি ভাঙা যাবে না। কমিটি ভাঙতে হলে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করতে হবে। নেত্রী (শেখ হাসিনা) পর্যন্ত বিষয়টি গড়াবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে যে, কমিটি ভাঙার জন্য ওই সুপারিশ যথাযথ কিনা?
তিনি বলেন, কোনো কারণে কোনো নেতার সঙ্গে কারো বনিবনা হল না, যে কাউকে বহিষ্কার করে দেওয়া হলো। এভাবে বহিষ্কার করা যাবে না। কমিটি নিয়ে বসতে হবে। কমিটির কাছে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু সরাসরি বহিষ্কার করতে পারবেন না।
নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখন সুসময়, কিন্তু দুঃসময় আসবে না- এটা কখনও ভাববেন না। কেউ কারও থাকবে না। আজ নিজের মনে করে একজনকে নেতা বানাচ্ছেন, আপনার যখন খারাপ সময় আসবে আপনাকে সালামও দেবে না। কাজেই এসব নেতা বানিয়ে লাভ নেই।’
দলের ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, আবদুর রহমান, শাজাহান খান, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ইকবাল হোসেন অপু, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিসহ ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় সংসদ সদস্যরা।