কথাটি শুনতে একটু অবাক লাগতে পারে। কেউ কেউ বিষয়টিকে কাল্পনিক বা পাগলামি ভাবতে পারেন। না, এটি কাল্পনিক নয়, বাস্তব। বেশ ঘটা করে, গান বাজনা ও উৎসাহের মাধ্যমেই ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় দেয়া হলো গাছে গাছে বিয়ে। শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকায় পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষণপুর নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সবুজের সঙ্গে সবুজের মিতালি সম্পর্কের মতো মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব তৈরি করতেই মূলত এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন বললেন আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাওসার আলম সোহেল। তিনি বলেন, গত ৩ মাসে “লাল সবুজের প্রচেষ্টা সবুজ করবো দেশটা” স্লোগানে আমরা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এ পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৭০০ গাছের চারা বিতরণ করেছি। তিনি আরো বলেন গাছে গাছে বিয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে গাছের সাথে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। নির্দেশনা ছিল, আমরা যেনো বিয়ের মাধ্যমে গাছের যত্ন নেই, পরিচর্যা ও বংশ বিস্তারের মাধ্যমে আরো গাছের চারা রোপণ করি। গাছের বিয়ের শুরুতেই দুই পক্ষকে পূরণ করতে হয় একটি নিকাহনামা। এতে দেওয়া হয়েছে কিছু শর্ত। এরমধ্যে বলা হয়েছে, ‘দুটো গাছকেই আমরা পরিবারের সদস্য হিসেবে সব ধরনের পরিচর্যা, যত্ন, মর্যাদা এবং অধিকার প্রদান করবো, গাছ দুটো যে পরিবারেই থাকুক না কেন, আমরা নিয়মিতভাবে গাছ দুটির খোঁজখবর রাখবো, শুধু ফোন বা সামাজিক মাধ্যমেই নয়, আমরা এক পরিবার অন্য পরিবারের বাড়িতেও যাবো, আমরা যেখানেই থাকি না কেন সবুজের পাশে থাকবো এবং সবুজের জন্য কাজ করবো, আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমাদের থেকেও বেশি সবুজ বান্ধব করে গড়ে তুলবো এবং সবুজের নামে শপথ করে বলছি, আমরা কখনই আমাদের এ অংশীদারিত্ব ভেঙে যেতে দেবো না। আমের গলায় মালা দিলো জলপাই। হলো মালা বদল। না, শুধু মালা বদল কেন। জলপাইয়ের বাড়িতে বধূ হিসেবে উঠে গেলো আম। এখন থেকে জলপাইয়ের মালিককে খবর রাখতে হবে আমের। খাবার পেলো কিনা, অসুখ হলো কিনা। এভাবেই বিয়ে হয়ে গেলো আম গাছ ও জলপাই গাছের। বিয়ের গান দিয়েই শুরু হয় গাছের সঙ্গে গাছের বিয়ের অনুষ্ঠান। কাবিননামায় স্বাক্ষর, পরে মালা বদল, এরপর সাক্ষীদের স্বাস্থ্যকর এবং মিষ্টি খাওয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় গাছ দুটির বিয়ে। এভাবে একে একে ৫০ জোড়া গাছের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে ১ হাজার শিক্ষার্থীদের মাঝে এ চারা তুলে দেওয়া হয়। গাছে গাছে বিয়ে অনুষ্ঠানে লক্ষণপুর নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম শেখ কামালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি কাওসার আলম সোহেল, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল আওয়াল পাটোয়ারী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কাজী সাহেব হিসেবে বিয়ে পাঠ করান কাওসার আলম, স্বাক্ষী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা, প্রধান শিক্ষক এস এম শেখ কামাল ও উকিল বাবা ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল আওয়াল পাটোয়ারী। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন লাল সবুজ মনোহরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাবউদ্দিন পরশ, প্রচার সম্পাদক সামছুউদ্দিন ফাহিম, অর্থ সম্পাদক তুহিন ও সিনিয়র সদস্য আহমেদ রায়হান প্রমুখ।