বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২২ অপরাহ্ন

করোনা রোগীদের চিকিৎসার গা শিউরে ওঠা অভিজ্ঞতা জানালেন ইতালির ডাক্তার

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ, ২০২০
  • ৫৮০ Time View

ইতালিতে গতকাল বুধবার ১৯৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার জেরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২৭ জনে ঠেকেছে। এখন পর্যন্ত ১২ হাজার চারশ ৬২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সে দেশে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপে কন্টে নির্দেশ দিয়েছেন, ওষুধের ফার্মেসি বাদে সবগুলো দোকান, রেস্টুরেন্ট ও অনুষ্ঠানের ভেন্যু বন্ধ করে দিতে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ইতালির একজন চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এরই মধ্যে নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাতে উঠে এসেছে, ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই চিকিৎসক করোনাভাইরাসকে সুনামির সঙ্গে তুলনা করেছেন।

ইতালির হিউম্যানিটাস গাভাজেনি হসপিটালের ডা. ডেনিলে ম্যাকিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই, এ রোগের লক্ষণ ও অবহেলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করেছেন। 

তিনি লিখেছেন, এখানে আমাদের সঙ্গে কী ঘটছে এবং কী লিখবো তা নিয়ে অনেক ভাবনা-চিন্তার পর মনে হলো- চুপ থাকা দায়িত্ববানের কাজের মধ্যে পড়ে না। করোনাভাইরাসের দাপটের মুহূর্ত আমি বার্গামোতে কাটিয়েছি। আমি জানি যে, এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক তৈরি করা যাবে না। কিন্তু ভয়াবহতার বার্তা যখন মানুষের কাছে একেবারেই পৌঁছে না, তখন সেটি আর ভয়ের।

বার্গামোতে এক লাখ ২২ হাজার মানুষ বাস করে। মিলান থেকে ৩০ মাইল দূরের এই শহরে ১২৪৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

ডা. ডেনিলে ম্যাকিনি লিখেছেন, গত সপ্তাহে আমি পুরো হাসপাতাল পর্যবেক্ষণ করে দেখে অবাক হয়েছি। আমাদের বর্তমান শত্রু তখন পর্যন্ত এতো ভয়াবহ আকারণ ধারণ করেনি। হাসপাতালের ওয়ার্ড তখনো খালি ছিল, বিদ্যুৎও চলে যাচ্ছিল মাঝে মাঝে।

তিনি আরো লেখেন, বর্তমানের মতো নিরবতা আর হাসপাতালের করিডোরগুলোতে পরাবাস্তব শূন্যতা অতীতে আর কখনো দেখিনি। আমরা এমন এক যুদ্ধ শুরুর আগ মুহূর্তে আছি, যা এখনো সেই অর্থে শুরু হয়নি। অনেকে (আমিসহ) নিশ্চিত ছিলেন না যে এ জাতীয় বর্বরতা কখনো আসবে।

আমি এখনো মনে করতে পারছি যে, সপ্তাহখানেক আগে এক রাতে একজনের পরীক্ষার (করোনা) ফল জানার অপেক্ষায় আছি। যখন আমি এটা বুঝতে পারলাম, আমার আতঙ্ক বেড়ে গেল। আমি এখন দেখতে পাচ্ছি, কী ঘটতে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এখন নাটকীয়ভাবে মোড় নিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এই ভাইরাস ‘বিস্ফোরিত’ হয়েছে। সময়ের পরিবর্তনে ভয়বহ আকার নিচ্ছে। হাসপাতালে খালি করা ওয়ার্ডগুলো ক্ষণিকের মধ্যে পূরণ হয়ে যাচ্ছে। এখন হাসপাতালে বেডের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এখন কাউকে সার্জারি করতে গেলেও করোনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে। 

চিকিৎসকের এই পোস্ট ৩৫ হাজারের বেশিবার শেয়ার করা হয়েছে। তবে  ডা. ডেনিলে ম্যাকিনি সবাইকে অনুরোধ করেছেন, করোনাভাইরাসকে যেন কোনো ফ্লুর সঙ্গে তুলনা না করা হয়।

তিনি লিখেছেন, এখানে বাড়তি কোনো সার্জন নেই, ইউরোলজিস্ট নেই, অর্থোপেডিক্স নেই; আমরাই এই সুনামি মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছি। আমি চিকিৎসকদের চোখেমুখে যে ক্লান্তি দেখেছি, তাতেই বোঝা যায় কী পরিমাণ চাপ তাদের ওপর পড়েছে।

চিকিৎসকরা ‘বেড’ সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং রোগীদের ধরে ওঠানো-নামানোর কাজ করছেন। এমনকি তারা থেরাপিস্টদের কাজ থেকে শুরু করে নার্সের কাজও করছেন। ওদিকে নার্সরা ছোখের পানি ফেলছেন সবাইকে বাঁচাতে না পেরে।

এখানে কোনো শিফট নেই, আলাদা কর্মঘণ্টা নেই। সামাজিক জীবন বলে কিছু নেই আমাদের। পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় তাদের সঙ্গে তেমনভাবে দেখা পর্যন্ত করছি না।

তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, এরই মধ্যে তার অনেক সহকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে তারা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Suchana Community TV
themebazsuchana231231