করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যাপক ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশের পর্যটন ও বিমান খাত। ঢাকা থেকে চীনসহ বিভিন্ন দেশের ফাইটে যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে বাংলাদেশীদের বিদেশ ভ্রমণ ৭০ শতাংশের মতো কমে গেছে। যাত্রী সঙ্কটে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ফাইট বাতিলের ঘটনাও ঘটছে। ফাইটের বুকিং বাতিল করা ছাড়াও টিকিট কনফার্ম থাকা যাত্রীদের বিমানবন্দরে উপস্থিত না হওয়ার (নো-শো) পরিমাণ বাড়ছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে এমনটি হয়েছে বলে পর্যটন সংস্থাগুলো জানিয়েছে।
তাদের মতে, ভাইরাস আতঙ্কে বিশেষ করে থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুরসহ দণি এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশী পর্যটকদের প্রায় ৭০ শতাংশের যাতায়াত কমেছে। বাকি ৩০ শতাংশ অতি জরুরি ব্যবসায়িক প্রয়োজনে যাতায়াত করছেন। এতে ধস নেমেছে পর্যটন খাতের অন্যতম এয়ারলাইন্স ব্যবসায়।
বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, চীনে সারা বছরই বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা যাতায়াত করেন। তবে চার সপ্তাহ ধরে নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া কেউ চীন যাচ্ছেন না। ফাইটগুলো প্রায় খালি যাতায়াত করছে।
ট্যুর অপারেটরদের মতে, করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর গত এক মাস দণি এশিয়ার প্রতিটি রুটের ফাইটগুলোর কোনোটিই ফুল প্যাকড হয়ে যাতায়াত করেনি। আবার যারা আগে টিকিট করেছিলেন; তাদের অনেকেই টিকিট বাতিল করছেন।
অন্য দিকে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) জানিয়েছে, করোনার প্রভাবে চীন, হংকংসহ আশপাশের দেশগুলোতে যাত্রীরা যাতায়াত না করায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি একটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের ফাইটে ব্যাংকক থেকে ঢাকায় এসেছেন মাত্র একজন যাত্রী।
একাধিক এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা জানান, তাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ভাইরাস আতঙ্কে ভুগছেন। কর্মীদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলমের মতে, উহান ভাইরাস পুরো এশিয়ার ট্যুরিজমে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, চীনের প্রচুর ট্যুরিস্ট বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের অনেকে অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক কারণ ছাড়াও ভ্রমণে চীনকে বেছে নেন। কিন্তু ভাইরাসের কারণে এখন তা প্রায় বন্ধ।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের এখনো নাজুক অবস্থায় থাকা পর্যটন শিল্পের জন্য এটি একটি বড় আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার মুখপাত্র কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি কেবল বাংলাদেশনয়, গোটা দণি এশিয়ার পর্যটনে বড় ধাক্কা।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) জানায়, তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও সদস্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াগামীদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যাদের আগে ভিসা নেয়া ছিল তাদের কেউ কেউ এখনো বিশেষ কারণে চীন যাচ্ছেন। তবে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসা ট্যুরিস্টদের সংখ্যা কমেনি।
অপর দিকে ট্যুর অপারেটররা বলছেন, গত দেড় মাসে বাংলাদেশের বিদেশগামী ট্যুরিস্ট উদ্বেগজনক হারে কমেছে। আগে যত ট্যুর বুকিং হতো, বর্তমানে তার ৩০ শতাংশ কমে গেছে। পাশাপাশি চীনে নতুন করে কোনো ভিসা ইস্যু হচ্ছে না বিধায় সেখানে যাচ্ছেন না কোনো ট্যুরিস্ট।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ শতাংশই ভ্রমণ করেছেন দণি এশিয়ার দেশগুলোতে। বিদেশগামীদের ৮৭ শতাংশই ঘুরতে যান (ট্যুরিস্ট ভিসায়), বাকি ১৩ শতাংশ যান অন্যান্য কারণে। আগের বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম কয়েক সপ্তাহে এই হার ৩০-৪০ শতাংশের বেশি হবে না বলে জানাচ্ছে ট্যুর অপারেটরগুলো।