কবি আল-মাহমুদের বিদ্যালয়ে তার জীবন বৃত্তান্তে তুলে ধরলেও তার ছাত্রজীবনে বিদ্যালয়ে নেই তার স্বরণে কোন স্মৃতি । বর্তমানে কিংবা পূর্বের হয়তো অনেক শিক্ষার্থীরা জানেনা সোনালী কাবিনের বিশ্ববিখ্যাত কবি আল-মাহমুদ এই জগতপুর সাধনা উচ্চ বিদ্যালয় পড়াালেখা করেছিলেন । এই কবির নামে কোন স্মৃতি চিহ্ন বা নামফলক আছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। কবির স্বরণে কিছু করলে একদিকে যেমন কবিকে সম্মান দেওয়া হবে আবার নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরাও কবির সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পারবে । কিন্তু এই মহান কবির স্বরণে বা তার জীবিত অবস্থায় তার প্রিয় পাঠশালায় তাকে নিয়ে সম্মানা বা সংর্ধনা মতো উৎসবমূখর অনুষ্ঠান হয়েছে কিনা তা আজো প্রকাশ পায়নি । কবি আল-মাহমুদ একাধারে কবি সাহিত্যিক ও ভাষা সৈনিক । কবি আল-মাহমুদকে নিয়ে জগতপুর সাধণা উচ্চ বিদ্যালয়ে কোন আয়োজন না করায় অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থীই ভুলতে বসেছে প্রিয় কবি আল-মাহমুদকে । তাঁর স্মৃতি বিজড়িত এই পাঠশালায় তার নামে একটি ভবণের নামকরণ করলে হয়তোবা তাঁকে কিছুটা হলেও স্বরণ করা হবে। কবি আল-মাহমুদ স্মৃতি একটি পাঠাগার কিংবা তার নামকরণে বিদ্যালয়ে যে কোন শিক্ষাবিষয়ক যে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন জোরালো দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে । কবি আল-মাহমদু এই স্কুলে পড়লেও তার স্বরণে নেই কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই, নেই কোন স্মৃতি স্মারক। পাঠাগার। কবি আল-মাহমুদ এর জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানেনা অনেকেই যে এই প্রিয় কবির প্রিয় লেখাপড়া করেছিলেন কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি বর্তমান তিতাস থানার জগতপুর সাধনা উচ্চ বিদ্যালয়ে। কবি আল-মাহমদু জীবনাদর্শ সর্ম্পকিত তেমন বই নেই এই বিদ্যালয়ের পাঠাগারে । সময়োপযোগী ও চাহিদা সম্পন্ন বই না থাকায় এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছে এ্ কবি সম্পর্কে জানতে । নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে কবি আল-মাহমুদের শিক্ষাজীবনের স্মৃতি জগতপুর সাধনা উচ্চ বিদ্যালয়ের এই মহান কবির ছাত্র হওয়ার বীরত্বগাঁথা ইতিহাস।
মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) যিনি আল মাহমুদ নামে অধিক পরিচিত, ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন।বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে সক্রিয় থেকে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্ভঙ্গীতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন প্রবাসী সরকারের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে । তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত সরকার বিরোধী সংবাদপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ (১৯৭২-১৯৭৪) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে যে কয়েকজন লেখক বাংলা ভাষা আন্দোলন, জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি, অর্থনৈতিক নিপীড়ন এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন তাদের মধ্যে মাহমুদ একজন। কবি আল মাহমুদ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার বর্তমান তিতাস উপজেলার জগতপুর সাধনা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন। মূলত এই সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু। আল মাহমুদ বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি মধ্যযুগীয় প্রণয়োপাখ্যান, বৈষ্ণব পদাবলি, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল প্রমুখের সাহিত্য পাঠ করে ঢাকায় আসার পর কাব্য সাধনা শুরু করেন এবং একের পর এক সাফল্য লাভ করেন।
সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে মাহমুদ ঢাকা আগেমন করেন। সমকালীন বাংলা সাপ্তাহিক পত্র/পত্রিকার মধ্যে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলায় লেখালেখি শুরু করেন। তিনি পাশাপাশি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
আল মাহমুদ ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দা নাদিরা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ ১৫ ফেব্রয়ারি ২০১৯ খ্রি.শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
৯ ফেব্রুয়ারি রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি আল মাহমুদ। তাকে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আরও গুরুতর হলে শুক্রবার তাকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দেয়া হয়। পরে রাত ১১টা ৫ মিনিটে তিনি মারা যান।কবি আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ সময়ে নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। পুরস্কার ও সম্মাননাসমূহ হলো: বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮), জয় বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬), কবি জসীম উদ্দিন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০), ভানুসিংহ সম্মাননা পদক (২০০৪), লালন পুরস্কার (২০১১)।
কবির উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ: লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৭৬), আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া, অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না, Al Mahmud In English, দিনযাপন, দ্বিতীয় ভাঙ্গন, একটি পাখি লেজ ঝোলা, পাখির কাছে ফুলের কাছে, আল মাহমুদের গল্প, গল্পসমগ্র, প্রেমের গল্প, যেভাবে বেড়ে উঠি, কিশোর সমগ্র, কবির আত্নবিশ্বাস, কবিতাসমগ্র, কবিতাসমগ্র-২, পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধ বণিক, ময়ূরীর মুখ, না কোন শূন্যতা মানি না, নদীর ভেতরের নদী, পাখির কাছে ফুলের কাছে, প্রেম ও ভালোবাসার কবিতা, প্রেম প্রকৃতির দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা, প্রেমের কবিতা সমগ্র, উপমহাদেশ, বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ, উপন্যাস সমগ্র-১, উপন্যাস সমগ্র-২, উপন্যাস সমগ্র-৩, তোমার গন্ধে ফুল ফুটেছে (২০১৫), ছায়ায় ঢাকা মায়ার পাহাড় (রূপকথা), ত্রিশেরা, উড়াল কাব্য।