আজ রবিবার দেশবরেণ্য সিনিয়র রাজনীতিক ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৭৮ তম জন্মদিন। তিনি ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ঢাবি’র ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী, প্রথিতযশা ভূ-বিজ্ঞানী এবং খ্যাতিমান লেখক।
ড.মোশাররফ দাউদকান্দি হাইস্কুল থেকে ‘৬২ সালে মেট্রিকুলেশন, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে ‘৬৪ সালে আই.এসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘৬৮ সালে এম.এসসি, ‘৭০ সালে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে এম.এসসি, ‘৭৩ সালে ডিআইসি ডিপ্লোমা এবং ‘৭৪ সালে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। ‘৭৫ সালে বিলাত থেকে দেশে ফিরে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ‘৮৭ থেকে ‘৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ‘৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবার জন্য তিনি ঢাবি’র শিক্ষকতা থেকে পদত্যাগ করেন।
এই আলোকিত রাজনীতিক ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাবি’র সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এজিএস এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের ভিপি নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির জন্য ড.মোশাররফ ‘৭১ এ বিলাত প্রবাসীদের সংগঠিত করেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসাবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। জাতীয় স্বার্থরক্ষার আন্দোলনে তিনি কখনো পিছপা হননি। বিভিন্ন সরকারের মামলায় ড. মোশাররফ ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৭, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৫ বছর কারান্তরীণ ছিলেন। ‘৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ঢাবি’র এই মেধাবী শিক্ষক বিএনপিতে যোগদান করেন। ড.মোশাররফ বিএনপি’র বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ‘৯৪ সাল থেকে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। ড.মোশাররফ কুমিল্লা-১ আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ‘৯১-‘৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের বিদ্যুৎ,জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী, ‘৯৬ সালে স্বল্প মেয়াদে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০১-০৬ মেয়াদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. মোশাররফ ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫৬ তম সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর সভাপতিত্বে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) গৃহীত হয়। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং বিশ্বব্যাপী তামাক বিরোধী আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ড.মোশাররফকে ‘World no tobacco award-2004’ পদকে ভূষিত করেন। ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান’, ‘প্লাবণ ভূমিতে মৎস্য চাষ: দাউদকান্দি মডেল’, ‘সংসদে কথা বলা যায়’, ‘এই সময়ের কিছু কথা’,’ ‘ফখরুদ্দিন- মইন উদ্দিনের কারাগারে ৬১৬ দিন’, ‘রাজনীতির হালচাল’, ‘সময়ের ভাবনা’ এবং ‘জরুরী আইনের সরকারের দুই বছর (২০০৭ ও ২০০৮)’ নামের ৮টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাময়িকিতে তাঁর ৫০টির বেশী বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ভূ-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ড.মোশাররফের জীবনবৃত্তান্ত ‘Who is in the World’ কেমব্রীজ বায়োগ্রাফি জার্নাল এবং আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইন্সটিটিউট প্রকাশিত পুস্তকে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
ভূ-তত্ত্ব বিষয়ে স্ট্রাকচারাল এ্যানালাইসিসে তাঁর নতুন উদ্ভাবন ‘Hossains method of extension’ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি নোবেল পুরুস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুস সালাম প্রতিষ্ঠিত আইসিটিটি’র এসোসিয়েট সদস্য এবং Third World academy of science এর একজন ফেলো।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুই ছেলে এবং এক কন্যা সন্তানের জনক।