মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০৬ অপরাহ্ন

আজহারীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, বিলাসবহুল সেই গাড়িটি তার নয়

সূচনা টিভি ডেস্ক :
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ৫৪২ Time View

এই সময়ের আলোচিত ও জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে– তরুণ এই বক্তা একটি বিলাসবহুল গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসা। আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে– তিনি গাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে কেউ কেউ দাবি করছেন, গাড়িটির মালিক আজহারী। আজহারী কী করে কয়েক কোটি টাকা দামের এই বিলাসবহুল গাড়ি কিনলেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
তবে তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, যে গাড়িটি নিয়ে এত কথা হচ্ছে, সেটির মালিক মিজানুর রহমান আজহারী নন। সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে গাড়িটি তিনি কিছু সময়ের জন্য চালিয়েছিলেন মাত্র। মূলত আজহারীর সমালোচকরাই তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে ফেসবুকে এই ছবি ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
বেন্টনি স্টাইল স্পার (SJZ888IR) মডেলের এই গাড়িটির মালিক বাংলাদেশি এক ব্যবসায়ী। তার নাম সাহিদুজ্জামান টরিক। তিনি সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলায়।
মিজানুর রহমান আজহারী গত বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে একটি তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে বয়ান করতে গিয়েছিলেন। সেখানকার বাংলাদেশ কনিউনিটি আয়োজিত ওই মাহফিলটি সিঙ্গাপুর সরকারের অনুমতি নিয়ে সেখানে খাদিজা মসজিদে করা হয়েছিল। সেখানে তিনি সুরাতুল মুমিনুলের ওপর তাফসির পেশ করেন।
তখন কমিনিউটির নেতা হিসেবে মিজানুর রহমান আজহারীকে আতিথেয়তা দেন সাহিদুজ্জামান টরিক। এই সময়ে আজহারীকে নিজের গাড়িতে করে সিঙ্গাপুরের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখান টরিক। তখন আজহারী কিছু সময়ের জন্য এই গাড়িটি চালান।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হয় সাহিদুজ্জামান টরিকের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, যে গাড়ি নিয়ে এত কথা হচ্ছে সেটির মালিক মিজানুর রহমান আজহারী নন। গাড়িটির মালিক আমি। তিনি (আজহারী) সিঙ্গাপুরে মাহফিল করতে এলে আমার গাড়িতে চড়েন। তখন কিছু সময় তিনি গাড়িটি ড্রাইভ করেন। এর বেশি কিছু নয়।
এদিকে যারা আজহারীর গাড়ি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের ভাষ্য হচ্ছে– কম করে হলেও ৫ কোটি টাকা দামের এই গাড়ির মালিক আজহারী। তিনি মালয়েশিয়া গিয়ে এই গাড়ি চালান। ইসলামের একজন দায়ি হয়ে মালয়েশিয়ায় কি করে এত দামি গাড়ি কেনেন আজহারী এমন প্রশ্ন তোলেন তারা।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন আজহারীর সুহৃদরা। এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন– গাড়ির নেমপ্লেট দেখলেই বোঝা যায় এটি মালয়েশিয়ার কোনো গাড়ি নয়। এখানে SJZ888IR লেখা। আর এমন নেমপ্লেট সিঙ্গাপুরের গাড়িগুলোর হয়ে থাকে।
মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিক ও চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাইজার রহমান ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন– ‘আমি মাইকে ওয়াজের বিরোধী। ভালো বক্তা হিসেবে অল্পসময়ে খ্যাতি পাওয়া মিজানুর রহমান আজহারীর মালয়েশিয়া ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনেকের মতো আমিও খুশি। গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিজানের দামি গাড়ি নিয়ে যে খবরটি ছড়াচ্ছে তা দেখে দুই লাইন না লিখে থাকতে পারলাম না। ছবিটি সত্যি। তবে ছবিতে যে গাড়িটি দেখা যাচ্ছে, সেটি মিজানুর রহমান আজাহারীর নয়। কারণ এই গাড়ির মালিককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। ছবি দেয়া হলো– যাদের প্রয়োজন নম্বর মিলিয়ে নিন। বেন্টলি এই গাড়িটির মালিক সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সাহিদুজ্জামান টরিক। আমাদের চুয়াডাঙ্গার সন্তান। গুজব ছড়ানোর আগে একবার ভাবুন। গুজবে লবণের কেজি ২০০ টাকা বানিয়েছেন… সচেতন হোন। নিরাপদে থাকুন…।’
মিজানুর রহমান আজহারী আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। চলতি সময়ে তার তাফসির সাড়া ফেলেছে তরুণদের মাঝে।
সময়ের এই আলোচিত বক্তা এ বছরের মার্চ পর্যন্ত সব তাফসির কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময়ে গবেষণার কাজে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
কিছু দিন আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বার্তায় নিজের কর্মসূচি স্থগিত করার পেছনে পারিপার্শ্বিক কারণের কথা জানিয়েছেন এ মুফাসসির।
তিনি বলেন, রিসার্চের কাজে আবারও মালয়েশিয়া ফিরে যাচ্ছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুযোগ করে দিলে, আবারও দেখা হবে এবং কথা হবে কোরআনের মাহফিলে ইনশাআল্লাহ।
এ বছর বেশিরভাগ প্রোগ্রামই পারিবারিক ও সামাজিক সংকট নিয়ে কথা বলার কথা জানিয়ে তিনি জানান, পাশাপাশি কয়েকটি সুরার তাফসিরও করেছি। আশা করি, আলোচনাগুলো থেকে আপনারা উপকৃত হবেন।
আজহারী বলেন, আমি একজন নগণ্য মানুষ। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ছাত্র। কোরআনের ছাত্র হয়েই বেঁচে থাকতে চাই এবং নিরলস কাজ করে যেতে চাই। তাই সুপ্রিয় শ্রোতাদের বলব– প্লিজ আমাকে নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করবেন না।
‘আমাকে জড়িয়ে কোনো ব্যাপারে কাউকে গালাগাল করবেন না, অন্য কোনো মতাদর্শের আলেমদের হেয় বা ছোট করে কিছু বলতে যাবেন না। যদিও তাদের কেউ কখনও আমাকে ছোট করে কথা বলে। অনুরূপভাবে কোথাও আমাকে ডিফেন্ড করে তর্ক বা কমেন্ট করতে চাইলে, ভদ্রতা বজায় রেখে, যৌক্তিকভাবে এবং বিনয়ের সাথে সেটা করুন।’
সত্য একদিন উন্মোচিত হবেই হবে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের সাধারণ জনতার যে ভালোবাসা পেয়েছি, জানি না সিজদায় পড়ে কতটুকু অশ্রু ঝরালে এবং কোন ভাষায় শোকরগোজার হলে এর যথাযথ শুকরিয়া আদায় হবে। মালিকের দরবারে আলিশানে লাখো কোটি শুকর ও সুজুদ। ওয়ালহামদু লিল্লাহি ‘আলান্নি’আম।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Suchana Community TV
themebazsuchana231231