কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মারুকা ইউনিয়নের পশ্চিম চক্রতলা গ্রামের একটি দিঘির ২৫ বছরের বকেয়া খাজনা আদায় করা হয়েছে। এ বকেয়ার পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৪ হাজার টাকা। সম্প্রতি দাউদকান্দির সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সেলিম শেখ এই বকেয়া খাজনা আদায় করেন। এ ছাড়া বকেয়া খাজনা আদায়ের পর দিঘিরপাড়ের প্রকৃত দখলদার ও চাষীদের মাঝে আগামী এক বছরের জন্য ঐতিহ্যবাহী দিঘিটি ইজারা দেওয়া হয়। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ ও এসিল্যান্ডকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইজারাদারেরা। তারা জানান, তাদের এই দিঘির কয়েক শ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। প্রায় চার একর আয়তনের দিঘিটির নান্দনিক সৌন্দর্যও রয়েছে। এখন তারা দিঘিতে মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪-১৯৯৫ অর্থবছরে চক্রতলা গ্রামের বেনী ভূষণ দত্তকে অর্পিত সম্পত্তির এই দিঘি এক বছরের জন্য ইজারা দিয়েছিল সরকার। ১৪০১ বাংলা সন পর্যন্ত সরকারি ইজারা রাজস্ব প্রদান করে তিনি মারা যান। পরে তাঁর ওয়ারিশগন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান ।উপজেলা ভূমি কার্যালয় বার বার নোটিশ প্রদান করেও তাঁর ওয়ারিশদের খোঁজে পাননি। দাউদকান্দির সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সেলিম শেখ সম্প্রতি যোগদানের পর সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষে দীর্ঘদিনের বকেয়া খাজনার বিষয়টি তাঁর নজরে আসে। সরকারী ভূমি দখলে রাখা, বকেয়া খাজনসহ রাজস্ব আদায়ে তিনি তাৎক্ষণিক উদ্যোগ গ্রহন করেন। দিঘিটির ইজারা নবায়ন করতে মাইকিংসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এলাকাবাসীকে দিঘিটি ইজারা নিতে এলাকাবাসীকে আগ্রহী করে তোলেন। এলাকাবাসী দিঘির ইজারা বিষয়টি জানার পর ৩৭২ শতক দিঘির মধ্যে ২ একর ৪৮ শতক দিঘির ইজারা নেওয়ার জন্য দুটি পক্ষ আবেদন করেন। এর মধ্যে দিঘিরপাড়ের বাসিন্দা মুসা মিয়া, শাহিন মিয়া , মো. রাতুল, ইসহাক মিয়া, মো. ইকবাল, মো. জজ মিয়া, মো. শাহজালাল আবেদন করেন। তারা দিঘির বাকি অংশের (এক একর ২৪ শতাংশ) মালিক। আরেকটি পক্ষের আবেদনকারির নাম মোস্তাক আহমেদ ও ইকবাল ভূইয়া। তারা দিঘিরপাড়ের বাসিন্দা না হয়েও পুকুরটি লীজ নেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা ও চাপ প্রয়োগ করেন। বিষয়টি উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সন্দেহ হলে যাচাই বাছাই পূর্বক দিঘিরপাড়ের প্রকৃত বাসিন্দা মুসা মিয়া গংদের বকেয়া খাজনা আদায় পূর্বক ইজারা প্রদান করেন। পুকুর পাড়ের প্রকৃত বাসিন্দারা লীজ পাওয়ার পর আনন্দ প্রকাশ করেন। ইজারা প্রাপ্তদের মধ্যে মুসা মিয়া বলেন, আমরা পুকুর পাড়ের বাসিন্দা হওয়ার পরও এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দিঘিটি ইজারা নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। দাউদকান্দি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সেলিম শেখ সঠিক তদন্ত করে আমাদেরকে ইজারা দিয়েছেন। তাঁর সেবা পেয়ে সন্তুষ্টি প্রদান করছি। দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষে মামলাটি নবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করি এবং নিয়মানুযায়ী দিঘিরপাড়ের বাসিন্দাদের দিঘির ইজারা দিতে চেষ্টা করি। সব কিছু যাচাই-বাছাই করে সঠিক লোকদের ইজারা দিতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের সেবা জনগনের দৌড় গোড়ায় পৌছে দিতে এই ধরণের উদ্যোগ চলমান থাকবে। দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুল ইসলাম খান বলেন, এসিল্যান্ড তার দক্ষতার মাধ্যমে দিঘিটি প্রকৃত লোকদেরই ইজারা দিতে সক্ষম হয়েছেন। এসিল্যান্ডকে ধন্যবাদ।