নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের পর ভয়াবহ ১১ সপ্তাহ পার করে লকডাইন মুক্ত হলো চীনের উহান। লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেয়ায় প্রাণ ফিরছে ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল এই শহরটিতে। তবে এখনো সহস্রাধিক মানুষ চিকিৎসাধীন থাকায় সেখানে পুরোপুরি ঝুঁকি কমেনি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ঘড়ির কাঁটা ১২ ছোঁয়ার সাথেসাথেই পুরোপুরি লকডাউনমুক্ত হলো করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান। এসময় করোনাভাইরাসে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আলোয় ভরে ওঠে উহানের আকাশ।
প্রায় ১১ সপ্তাহ পর আবারো স্বাভাবিক চেহারায় ফিরলো উহান। ব্যস্ততা ফিরেছে এতো দিন জনশুন্য থাকা সড়কে। চোখে পড়েছে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। সড়ক পথের মতো স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বিমান ও ট্রেন চলাচলও।
এক বাসিন্দা বলেন, আমরা পুরোপুরি নিরাপদ এমনটা বলার সময় এখনও আসে নি। এখনো অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কাজেই আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সম্প্রতি নতুন আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে আসায় আরোপ করা কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু হয়। হুবেই প্রদেশের এই রাজধানী শহরে গত ২১ দিনে নতুন নিশ্চিত সংক্রমণের মাত্র তিনটি ঘটনা ঘটেছে।
শিয়াংজিয়াং শহরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উহানের হানকৌ রেলস্টেশনে সুটকেস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিক লিউ শিয়াওমিন বলেন, আজ আমি বাড়িতে যাচ্ছি, আমি খুব খুশি।
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরপরই বেইজিং কর্তৃপক্ষ শহরটির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ঘরবন্দি করে রাখে ১ কোটিরও বেশি মানুষকে। উহানে ট্রেন, সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের পরিবহন এবং অন্যান্য রেল সংযোগ পুনরায় চালু করে দেওয়া হয়েছে। উহানের বাসিন্দারা এখন চাইলেই শহর ছেড়ে অন্য যে কোনো স্থানে যেতে পারবেন। তবে হেলথ অ্যাপের যারা সবুজ সংকেত পাবেন সেসব সুস্থ বাসিন্দা ও পর্যটকই চলাচল করতে পারবেন।
ভাইরাস বহনকারীদের নিশ্চিত করোনাভাইরাস সংক্রমিতদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে না চীনের কর্তৃপক্ষ।তবে তাদের মধ্যে জ্বর ও কাশির মতো লক্ষণ প্রকাশ পেলে তখন তাদেরও সংক্রমিত বলে ধরা হয়।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথম করোনা আক্রান্তের তথ্য মেলে। ২০২০ সালের ১১ই জানুয়ারি চীনে প্রথম মৃত্যু হয়।
২০ জানুয়ারি চীনের বাইরে জাপান, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। একদিন পর ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনেও উহান ফেরত এক ব্যক্তির শরীরে মেলে ভাইরাস। ২৩ জানুয়ারি ১৭ জনের মৃত্যু হলে উহানে সব যানবাহন প্রবেশ বন্ধ করে দেয় চীন।
চীনে মোট প্রাণহানি ৩ হাজারের বেশি, এর মধ্যে বেশিরভাগই মারা গেছেন উহানে। তবে, মার্চের শেষে এসে উল্লেখযোগ্য হারে কমে সংক্রমণ। ২৩ মার্চের পর স্থানীয়ভাবে কেউ করোনা আক্রান্ত না হওয়ায় ২৮ মার্চ আংশিক লকাডাউন তুলে নেয় সরকার।